• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

স্বাস্থ্য

কুষ্টিয়ায় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৭ জুলাই ২০২৩

আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় কুষ্টিয়ায় ৬জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে কুষ্টিয়া ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তিন জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শনাক্ত হয়েছে। তারা সকলেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে ঈদের পর থেকে এ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানিয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও নিজ নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে রবিবার (১৬জুলাই) পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় মোট ৫৩জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ৩৯জন, দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১জন, ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫জন, মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২জন, কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫জন ও খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১জন। তাতে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে একজন রোগী সনাক্ত হয়। তবে ফেব্রুয়াারি থেকে মে মাস পর্যন্ত কোন রোগী সনাক্ত না হলেও জুন মাসে এসে তা বেড়ে যায়। সেই হিসেবে জুন মাসে ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয় ৮জন। অপরদিকে আশঙ্কাজনক হারে চলতি মাসের ১৬জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে ৪৪জন। যা বর্তমানে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কুষ্টিয়ায় স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত না হলেও কুষ্টিয়া পৌরসভা ডেঙ্গু প্রতিরোধে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কুষ্টিয়া পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া পৌরসভার ২১ ওয়ার্ডে ইতিপূর্বে সাত জন কর্মী দিয়ে মশক নিধন করলেও বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে ২১জন কর্মী দিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম চলাচ্ছে প্রতিদিন। আর তাতে প্রতিদিন ২৩শত এমএল মশক নিধন ঔষধ ছিটানো হচ্ছে। পৌরসভার হিসাব অনুযায়ী গত ১২জুলাই মশক নিধনের ঔষধ স্টক ছিল ২লক্ষ ২০হাজার ৯শত এমএল। আর ব্যবহার হয়েছে ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার এম এল ঔষধ। যা সরকারি বেসরকারি সকল স্থানে এ ঔষধ ছিটানো হচ্ছে। রবিবার (১৬জুলাই) বেলা দেড়টার সময় সরেজমিন কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন কুমারখালী উপজেলা নাটুরিয়া গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে ৬বছরের শিশু আমির হামজা। তার মা রাফিজা জানান, আমির হামজাকে গত শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৩ দিন শিশুটি জ্বরে আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগেও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তখন ডেঙ্গুসহ অনেক টেস্ট দেয়া হয়েছিল। তখন কিছু ধরা পড়েনি। ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়েছিল। চারদিন সেগুলো খাওয়ানোর পরও কিছু হয়নি। পরে শুক্রবার ভর্তি করা হলে টেস্ট করে ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়ে। ডাক্তার বলেছে কোন সমস্যা নেই। শিশু আমির হামজা সেরে উঠবে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ তাপস কুমার সরকার বলেন, কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গত ২৫ জুন থেকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা পাওয়া শুরু করেছি। এরপর থেকে ২০শয্যা বিশিষ্ট ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করেছি। আজ পর্যন্ত ৯জন ডেঙ্গু রোগ ভর্তি রয়েছে। ২৫জুন থেকে এ পর্যন্ত ২৭জন রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছি। এর মধ্যে কোন জটিলতা সৃষ্টি হয়নি। ইতিমধ্যে ১৮জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে গেছে। কোনো জটিলতা না থাকায় কোন রোগীকে রেফার করা হয়নি। তবে এসব রোগীর মধ্যে বেশির ভাগই ঢাকা ফেরত। স্থানীয়ভাবে কেউ কোন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে কিনা এ ধরনের তথ্য আমাদের কাছে আসেনি । ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের এই হাসপাতালে আছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেকেই জেলার বাইরে থেকে আসা। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি। কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডাঃ এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় মোট ৫৩জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে। ঈদের পর থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলছে এ জেলায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত সকল রোগীই ঢাকা থেকে আসছে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জ্বর, এর থেকে সুস্থ হতে এন্টিবায়োটিক সেবনের কোনো প্রয়োজন নেই। জেনারেল হাসপাতাল এবং জেলার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্ত এবং চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে। তাই ডেঙ্গু জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads